Thursday, 17 September 2015

বিশ্বকর্মা পূজা - দুর্গাপূজার প্রাক্কালে নির্মাণ দেবতার আরাধনা

আজ বছরের সেই দিন যে দিন ঘুড়িতে ঘুড়িতে ছেয়ে উঠেছে আকাশ। প্রতিবছর এই সময় আসেন বিশ্বকর্মা আর ছড়িয়ে দিয়ে যান একমুঠো দুর্গাপুজোর গন্ধএকরাশ ভাললাগা। কিন্তু কে এই বিশ্বকর্মা?



স্বর্গের কারিগর

শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা বিশ্বকর্মা। ব্রহ্মাপুত্র বিশ্বকর্মাই গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেন। ঈশ্বরের প্রাসাদের নির্মাতাও বিশ্বকর্মা। দেবতাদের রথ ও অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই।
মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলের শিল্পকলার দেবতাসকল দেবতার প্রাসাদসকল প্রকার অলঙ্কারের নির্মাতা। বিবরণ অনুযায়ী তাঁর চার বাহুমাথায় রাজার মুকুটহাতে জলের কলসবইদড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র।

বিশ্বকর্মার কিছু অমর সৃষ্টি

হিন্দু পুরাণ জুড়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার বিভিন্ন নির্মাণ। সত্যত্রেতাদ্বাপরকলি-চার যুগ ধরে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার অমর কীর্তিরা। সত্যযুগে বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন স্বর্গলোক। এই প্রাসাদ থেকেই দেবরাজ ইন্দ্রের মর্ত্যলোক শাসন করতেন। ত্রেতা যুগে বিশ্বকর্মা সৃষ্টি করেন সোনার লঙ্কা। দ্বাপর যুগে সৃষ্টি করেন দ্বারকা। কলিযুগে বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ।

স্বর্ণলঙ্কা
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ত্রেতা যুগে রাবণ রাজার রাজধানী ছিল সোনার লঙ্কা। পার্বতীর সঙ্গে বিয়ের পর মহাদেব প্রাসাদ নির্মাণের ভার দেন বিশ্বকর্মাকে। স্বর্ণপ্রাসাদ নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। গৃহপ্রবেশের পুজোর জন্য রাবণ রাজাকে আমন্ত্রণ জানান মহাদেব। পুজোর পর দক্ষিণা স্বরূপ মহাদেবের কাছে স্বর্ণলঙ্কা চান রাবণ। রাবণের হাতে স্বর্ণলঙ্কা তুলে দেন মহাদেব। সেই থেকেই রাবণের রাজধানী স্বর্ণলঙ্কা।

দ্বারকা
দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি। মহাভারতে দ্বারকাই কৃষ্ণের কর্মভূমি হিসেবে উল্লিখিত। হিন্দুদের অন্যতম দর্শনীয় ও পূজনীয় শহর দ্বারকা।

হস্তিনাপুর
কলিযুগে কৌরব ও পাণ্ডবদের রাজধানী হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরে অভিষিক্ত করেন কৃষ্ণ।

ইন্দ্রপ্রস্থ
পাণ্ডবদের শহর ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই। পাণ্ডবদের থাকার জন্য এক টুকরো জমি দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। বন্য জীবজন্তুতে ভরা ভয়ঙ্কর সেই খাণ্ডবপ্রস্থে মা, দ্রৌপদী ও ভাইদের সঙ্গে থাকতেন যুধিষ্ঠির। পরে খাণ্ডবপ্রস্থে রাজধানী নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণ। তৈরি হয় ইন্দ্রপ্রস্থ। এই ইন্দ্রপ্রস্থ ছিল মায়ানগরী। প্রাসাদের মাটি দেখলে মনে হত যেন স্বচ্ছ জল টলটল করছে। পুকুরের স্বচ্ছ জলের মধ্যে দিয়ে আয়নার মতো চকচক করতো মাটি। প্রাসাদ তৈরির পর পাণ্ডবদের নিমন্ত্রণ রক্ষায় ইন্দ্রপ্রস্থে যান কৌরবরা। মায়ানগরীর মায়া বুঝতে না পেরে পুকুরের জলে পড়ে যান দুর্যোধন। তাকে পড়ে যেতে দেখে হেসে উঠেছিলেন দ্রৌপদী। অন্ধ বাবার অন্ধ ছেলে বলে দুর্যোধনকে অপমান করেন দ্রৌপদী। এর প্রতিশোধেই দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের ঘটনা ঘটে যার চরম পরিণতি ছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূত্রপাত

No comments:

Post a Comment