Thursday, 24 September 2015

দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্র ও তার ব্যাখ্যা

দেবীদুর্গার রূপের বিবরণ পাওয়া যায় দেবীর ধ্যানমন্ত্রেই। মন্ত্রসহ দেবীর সেই রূপই বিস্তারিত বর্ণিত হল আজ।



ধ্যানমন্ত্র

জটাজুট সমাযুক্তাং অর্ধেন্দু কৃতশেখরাম্।
লোচনত্রয় সংযুক্তাং পূর্ণেন্দু সদৃশাননাম্।।।।
অতসীপুষ্প বর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্।
নবযৌবন সম্পন্নাং সর্ব্বাভরণ ভূষিতাম্।।।।

সূচারু দশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত পয়োধরাম্।
ত্রিভঙ্গস্থান সংস্থানাং মহিসাসুরমর্দীনিম্।।।।
মৃণালায়াত সংস্পর্শ দশবাহু সমন্বিতাম্।
ত্রিশুলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খর্গং-চক্রং ক্রমাদধঃ।।।।

তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ।।১০।।
ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।
অধস্থান মহিষং তদ্বৎবিশিরক্ষং প্রদর্শয়েৎ।।১২।।

শিরোচ্ছেদোদ্ভবং তদ্বৎ দানবং খর্গ পাণিনম্।
হৃদি শুলেন নির্ভিন্নং নির্যদন্ত্র বিভূষিতম্।।১৪।।
রক্তারক্তী কৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটি ভীষণাননাম্।।১৬।।

সপাশ বামহস্তেন ধৃতকেশঞ্চ দুর্গয়া।
বমদ্রুধির বক্ত্রঞ্চ দেব্যা সিংহং প্রদর্শয়েৎ।।১৮।।
দেব্যাস্তু দক্ষিণাং পাদং সমং সিংহোপরিস্থিতম্।
কিঞ্চিৎ ঊর্ধ্বং তথা বামঅঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।।২০।।
স্তুয়মানঞ্চ তদ্রূপ মমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
প্রসন্নবদনাং দেবীং সর্ব্বকাম ফলপ্রদাং।।২২।।

উগ্রচন্ডা প্রচন্ডা চ চন্ডোগ্রা চন্ডনায়িকা।
চন্ডা চন্ডবতী চৈব চন্ডরূপাতিচন্ডিকা।।২৪।।
অষ্টাভি শক্তিভিরষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্।
চিন্তয়েৎ জগতাং ধাত্রিং ধর্মকামার্থ মোক্ষদাম্।।২৬।।

ব্যাখ্যা

দেবীর মাথায় জটা, সাথে অর্ধচন্দ্রের মত কপাল। পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখ তাঁর ও গায়ের রঙ অতসীফুলের মতো। তিনি সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত এবং তাঁর সর্বাঙ্গ বিভিন্ন অলঙ্কার দ্বারা ভূষিত। ।২-৪।

তাঁর দাঁত সুন্দর এবং ধারালো, স্তন সম্পূর্ণ। তিন ভাঁজে দাঁড়িয়ে তিনি দৈত্য নিধন করছেন। দশহাতভর্তি অস্ত্র তাঁর যা দেখতে শাখা-প্রশাখা সমন্বিত পদ্ম গাছের মতো। ডানদিকের উপরের হাতে অবস্থান করে ত্রিশুল, তারপর ক্রমান্বয়ে খর্গ এবং চক্র। ।৬-৮।

দেবীর দক্ষিণের সর্বনিম্ন দুই হাতের অস্ত্র ধারালো তীর এবং বর্শা। দেবীর ধ্যানে বর্ণিত হয় তাঁর বাঁ হস্ত। সেদিকে সবচেয়ে নিচের হাতে থাকে চামড়ার ঢাল ও তার উপরের হাতে ধনুক। সেগুলির উপরের হাতে থাকে সর্প, অঙ্কুশ এবং কুঠার (ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে)। দেবীর পায়ের কাছে দৈত্যরাজের মাথার স্থান। ।১০-১২।

মহিষের কাটা মাথা থেকে মহিসাসুরের দেহ অর্ধেক উত্থাপিত, হাতে তাঁর খর্গ এবং হৃদয়ে দেবীর ত্রিশূল দ্বারা বিদ্ধ। তাঁর পেট থেকে নাড়িভূঁড়ি নির্গত হয়েছে। শরীর রক্তলিপ্ত। দেবীর হাতে ধরা সাপ দ্বারা অসুরের দেহ বেষ্টিত। তবে উত্থিত ভ্রূ তে দৈত্যের রূপও ভয়ঙ্কর। ।১৪-১৬।

দেবী তাঁর বাম হাত দিয়ে দৈত্যরাজের চুল টেনে রেখেছেন। দেবীর ডান পা বাহন সিংহের উপরে এবং বাঁ পা কিঞ্চিৎ উর্ধে মহিষের উপরে অবস্থান করে। প্রবল যুদ্ধরত অবস্থাতেও দেবী তাঁর শান্তিপূর্ণ মুখাবয়ব ও আশীর্বাদী রূপ বজায় রেখেছেন এবং সমস্ত দেবতা দেবীর এই রূপের স্তুতি করেন। ।১৮-২২।
                                
দেবীর উপরোক্ত রূপ দেবতাদের আট শক্তি উগ্রচন্ডা, প্রচন্ডা, চন্ডোগ্রা, চন্ডনায়িকা, চন্ডা, চন্ডবতী, চন্ডরূপ ও অতিচন্ডিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত। গৃহকর্তার মানব জীবনের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ করেন এই দেবী। তাই ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের জন্য জগন্মাতৃকা দেবী দুর্গার ধ্যানই মানবজাতির হওয়া উচিত। ।২৪-২৬।

বি.দ্র. : দেবীর ধ্যানমন্ত্রের তৃতীয় ছত্রে দেবীর গায়ের রং অতসীপুষ্পের মতো বলে বর্ণিত হয়েছে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায়। ‘তপ্ত কাঞ্চন বর্ণাভাং’ অর্থাৎ তপ্ত বা গরম গলিত সোনার সঙ্গেও দেবীর গায়ের রঙের তুলনা করা হয়েছে বিভিন্ন শাস্ত্রে। তবে এই দুটিই বহুল প্রচলিত এবং দেবীপ্রতিমাতেও দু’রকম রঙেরই ব্যবহার দেখা যায়, ফলে যে কোনোটিই সঠিক বলে বিবেচিত।

Sunday, 20 September 2015

মা দুর্গার অকালবোধন এবং রামায়াণ যোগ

(Durga Puja in Autumn & Its Connection with Ramayana)


অযোধ্যাপতি রাম ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। ১৪ বছর বনবাসকালে তাঁর স্ত্রী সীতাকে দৈত্যরাজ রাবণ অপহরণ করেন। রাবণের কবল থেকে সীতা মুক্ত করার জন্য রাম দৈত্য রাজা বধ করার সিদ্ধান্ত নেন। ভগবান রাম রাবণের প্রাণনাশে সাফল্য অর্জনের জন্য দেবী দুর্গা কৃপা কামনা করেন ও সেজন্য তিনি আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। ঐতিহ্যগতভাবে দেবী দুর্গা বসন্ত ঋতুতে পূজিত হতেন। কিন্তু যুদ্ধের কারণে রাম শরৎ ঋতুতে দেবীর আশীর্বাদ জন্য প্রার্থনা করেন। জদিও শরৎকাল দেবদেবীদের শরৎ ঋতু সময় দীর্ঘ ঘুমের সময় বলেই জ্ঞাত। কারণ, এসময় দিন ছোট ও রাত বড় হয় এবং রাত সাধারণত রাক্ষস জাতির পরিচায়ক বলে গণ্য করা হয়।

                                    রাজা রামের দুর্গাপূজার কল্পিত চিত্র ।। সৌজন্যে : ইন্টারনেট (Wikimedia)


প্রথা অনুযায়ী দেবী দুর্গার অষ্টমীবিহিত সন্ধিপূজায় ১০৮ টি নীল পদ্মের প্রয়োজন হয়, কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও রাম শুধুমাত্র ১০৭ টি পদ্মের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। এসময় নিরুপায় হয়ে তিনি ১০৮ তম পদ্ম স্বরূপ এক তাঁর নিজের চোখ উপড়ে নিতে উদ্যত হন। এবিষয়ে উল্লেখ্য যে পতিতপাবন রামের চোখকে নীল পদ্মের সঙ্গে তুলনা করা হত বলে তাঁর অপর নাম ছিল ‘পদ্মলোচন’। মা দুর্গা এই প্রস্তাব পেয়ে রামের একনিষ্ঠতা দেখে খুশি হয়ে স্বয়ং ভগবান রামের সামনে আবির্ভূতা হন এবং দৈত্যরাজ রাবণকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্য শ্রীরামকে আশীর্বাদ করেন। মা দুর্গার এই অসময়ে আবাহন বাংলায় ‘অকালবোধন’ হিসাবে পরিচিত হয়। তারপর থেকেই শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা প্রচলিত হয়। শরৎকালীন দুর্গাপূজা শারদোৎসব নামে পরিচিত হয় এবং সমস্ত বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে বৃহদাকারে পালিত হয়। বসন্তকালীন দুর্গাপূজা বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত যা ঐতিহ্যগতভাবে মূল দুর্গাপূজা হলেও উদযাপনের উন্মাদনায় শরৎকালীন পুজোর তুলনায় প্রায় হারিয়ে গেছে বলে চলে।

Thursday, 17 September 2015

বিশ্বকর্মা পূজা - দুর্গাপূজার প্রাক্কালে নির্মাণ দেবতার আরাধনা

আজ বছরের সেই দিন যে দিন ঘুড়িতে ঘুড়িতে ছেয়ে উঠেছে আকাশ। প্রতিবছর এই সময় আসেন বিশ্বকর্মা আর ছড়িয়ে দিয়ে যান একমুঠো দুর্গাপুজোর গন্ধএকরাশ ভাললাগা। কিন্তু কে এই বিশ্বকর্মা?



স্বর্গের কারিগর

শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা বিশ্বকর্মা। ব্রহ্মাপুত্র বিশ্বকর্মাই গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নকশা তৈরি করেন। ঈশ্বরের প্রাসাদের নির্মাতাও বিশ্বকর্মা। দেবতাদের রথ ও অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই।
মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলের শিল্পকলার দেবতাসকল দেবতার প্রাসাদসকল প্রকার অলঙ্কারের নির্মাতা। বিবরণ অনুযায়ী তাঁর চার বাহুমাথায় রাজার মুকুটহাতে জলের কলসবইদড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র।

বিশ্বকর্মার কিছু অমর সৃষ্টি

হিন্দু পুরাণ জুড়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার বিভিন্ন নির্মাণ। সত্যত্রেতাদ্বাপরকলি-চার যুগ ধরে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার অমর কীর্তিরা। সত্যযুগে বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন স্বর্গলোক। এই প্রাসাদ থেকেই দেবরাজ ইন্দ্রের মর্ত্যলোক শাসন করতেন। ত্রেতা যুগে বিশ্বকর্মা সৃষ্টি করেন সোনার লঙ্কা। দ্বাপর যুগে সৃষ্টি করেন দ্বারকা। কলিযুগে বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ।

স্বর্ণলঙ্কা
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ত্রেতা যুগে রাবণ রাজার রাজধানী ছিল সোনার লঙ্কা। পার্বতীর সঙ্গে বিয়ের পর মহাদেব প্রাসাদ নির্মাণের ভার দেন বিশ্বকর্মাকে। স্বর্ণপ্রাসাদ নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। গৃহপ্রবেশের পুজোর জন্য রাবণ রাজাকে আমন্ত্রণ জানান মহাদেব। পুজোর পর দক্ষিণা স্বরূপ মহাদেবের কাছে স্বর্ণলঙ্কা চান রাবণ। রাবণের হাতে স্বর্ণলঙ্কা তুলে দেন মহাদেব। সেই থেকেই রাবণের রাজধানী স্বর্ণলঙ্কা।

দ্বারকা
দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকা বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি। মহাভারতে দ্বারকাই কৃষ্ণের কর্মভূমি হিসেবে উল্লিখিত। হিন্দুদের অন্যতম দর্শনীয় ও পূজনীয় শহর দ্বারকা।

হস্তিনাপুর
কলিযুগে কৌরব ও পাণ্ডবদের রাজধানী হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরে অভিষিক্ত করেন কৃষ্ণ।

ইন্দ্রপ্রস্থ
পাণ্ডবদের শহর ইন্দ্রপ্রস্থও নির্মাণ করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই। পাণ্ডবদের থাকার জন্য এক টুকরো জমি দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। বন্য জীবজন্তুতে ভরা ভয়ঙ্কর সেই খাণ্ডবপ্রস্থে মা, দ্রৌপদী ও ভাইদের সঙ্গে থাকতেন যুধিষ্ঠির। পরে খাণ্ডবপ্রস্থে রাজধানী নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণ। তৈরি হয় ইন্দ্রপ্রস্থ। এই ইন্দ্রপ্রস্থ ছিল মায়ানগরী। প্রাসাদের মাটি দেখলে মনে হত যেন স্বচ্ছ জল টলটল করছে। পুকুরের স্বচ্ছ জলের মধ্যে দিয়ে আয়নার মতো চকচক করতো মাটি। প্রাসাদ তৈরির পর পাণ্ডবদের নিমন্ত্রণ রক্ষায় ইন্দ্রপ্রস্থে যান কৌরবরা। মায়ানগরীর মায়া বুঝতে না পেরে পুকুরের জলে পড়ে যান দুর্যোধন। তাকে পড়ে যেতে দেখে হেসে উঠেছিলেন দ্রৌপদী। অন্ধ বাবার অন্ধ ছেলে বলে দুর্যোধনকে অপমান করেন দ্রৌপদী। এর প্রতিশোধেই দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের ঘটনা ঘটে যার চরম পরিণতি ছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সূত্রপাত

Wednesday, 16 September 2015

শরৎ ও দুর্গাপূজা

কবিগুরুর লেখনী বলছে, "এসেছে শরৎ, হিমের পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে... শিউলির ডালে কুঁড়ি ভরে এলো, টগর ফুটিল মেলা...।" বাঙালি মানে যেমন দুর্গাপূজা, তেমনই আবার বাঙালি মানে রবিঠাকুরের লেখায় মজে থাকাও। আর তাঁর লেখায় যখন শরৎ বা দুর্গাপূজার কথা উঠে আসে, তখন সেটা অসাধারণ অনুভূতির সঞ্চার করে। বিশ্বকবির 'শরৎ' কবিতার উপরের লাইন দুটিই প্রমাণ করে যে ঋতুরানীর অপার সৌন্দর্য বাঙালি কতটা মুগ্ধ; জগৎজননীর আগমন বার্তা ঘোষণা করে এই শরৎ তার উপস্থিতির মাধ্যমে, আর শরতের উপস্থিতি ঘোষণা করে কারা? এরা - 

১. আমাদের অতি পরিচিত কাশ

২. শরতে বাঙালির ঘরোয়া পূজার প্রধান উপাদান শিউলি


 ৩. মফস্বলে যথেষ্ট পরিচিত হলেও কলকাতায় প্রায় অচেনা ছাতিম

 ৪. এবং সর্বোপরি দেবীপূজার অনন্য উপাদান পদ্ম


কাশের শুভ্রতা, শিউলির মিষ্টতা, ছাতিমের উগ্রতা এবং পদ্মের প্রয়োজনীয়তা,
সবে মিলে ঘোষণা করে দেবীমাতৃকার আগমনবার্তা...

Monday, 14 September 2015

দশমহাবিদ্যা - দেবীর তন্ত্রসাধনের রূপগুলি

দশমহাবিদ্যা হল মহাদেবীর দশটি বিশেষ দেহধারণ বা রূপ যার উল্লেখ পাওয়া যায় তন্ত্রে। মহাবিদ্যা কথার অর্থ মহান জ্ঞান। জগৎ প্রতিপালক নারায়ণের দশাবতার এর কথা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু এটা অনেকেই জানি না যে দেবীর দশ রূপের প্রত্যেকটিই নারায়ণের ঐ অবতার গুলিরই নারীরূপ। সৃষ্টির দশটি প্রধান বিষয়ও দেবীর এই দশ রূপের মাধ্যমে ফুটে ওঠে। দশমহাবিদ্যার রূপের একদিকে যেমন রয়েছে ভয়ঙ্করী রূপ, অন্যদিকে তেমনই আছে মোক্ষ ও অভয়দায়িনী রূপ। দেবীর এই দশ রূপের স্বল্প বর্ণনা এবং নারায়ণের দশাবতারের সঙ্গে দশমহাবিদ্যার সম্ভাব্য রূপের ব্যাখা রইল নিচে।



১. কালী - ব্রহ্মের চূড়ান্ত রূপ এই দেবী দুঃখ-কষ্ট ও ভাবাবেগ দূর করেন সময়ের দৈর্ঘ্য অপরিবর্তনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করেন - নারায়ণের কৃষ্ণ অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

২. তারা - ইনি নীল সরস্বতী নামেও পরিচিত; শব্দ-শক্তি-সময়-বিবেক-বুদ্ধি ও বিবেচনার সকরুণ দেবী ইনি - নারায়ণের মৎস্য অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

৩. ষোড়শী - দেবী পার্বতীর তান্ত্রিক রূপধারী এই দেবী আন্তরিক সৌন্দর্যের ঐশ্বরিক রূপের প্রতীক (ললিতা বা ত্রিপুরাসুন্দরী নামেও জ্ঞাত) - নারায়ণের পরশুরাম অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

৪. ভৈরবী - দেবী দুর্গা এখানে প্রচণ্ডাযাঁর মায়া ও ঐশ্বরিক শক্তি আদিম ক্ষমতা ধ্বংস করে - নারায়ণের কল্কি অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

৫. ভুবনেশ্বরী - জগৎ সৃষ্টিকারিণী দেবী বিশ্বমাতৃকা যাঁর বিস্তার অসীম - নারায়ণের বামন অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

৬. ছিন্নমস্তা - নিজ মস্তক ছেদনকারী রুপে এটিই দেবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও প্রচণ্ড অবতার - নারায়ণের নৃসিংহ অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

৭. ধূমাবতী - নিজেকে বিধবা করেন যে দেবী, বৈধব্য বা মৃত্যুর দেবী; এই রূপ অসম্পূর্ণতা, বিষণ্ণতা, ক্ষতি যন্ত্রণা প্রভৃতি নেতিবাচক দিক প্রকাশ করে - নারায়ণের বরাহ অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

৮. বগলামুখী - বাকশক্তির দেবী মা কালীর হিংস্র রূপ যিনি নিষিদ্ধ তন্ত্রের ভয়ংকর দেবী বলেও পরিচিত - নারায়ণের কূর্ম অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।

৯. মাতঙ্গী - তান্ত্রিক সরস্বতী যিনি শক্তিশালী চিন্তা গঠন করতে সক্ষম সত্য বোঝার ক্ষমতা প্রদান করেন - নারায়ণের রাম অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ। 

১০. কমলা - দেবী তান্ত্রিক লক্ষ্মী যাঁর ঐশ্বরিক প্রকৃতি, আলো, প্রেম ও সৌন্দর্য জড়জগৎ উদ্ভাসিত করে - নারায়ণের বুদ্ধ অবতারের সম্ভাব্য নারীরূপ।